সর্বশেষ সংবাদ >>

ভারতের নির্বাচনঃ কয়েকটি কথা

T24x7 সম্পাদক

সংসদ নির্বাচন। একটা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গনতান্ত্রিক পরিকাঠামোর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়। এর গুরুত্ব নিয়ে কথা বলার কোন সুযোগ নেই।মানুষ নিজের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে যে তার হয়ে তার জন্য কথা বলবে। অর্থাৎ গনপ্রজাতন্ত্রের প্রজার অস্তিত্বের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই সংসদ বা সাধারন নির্বাচন। আমাদের বক্তব্য নির্বাচন নিয়ে নয় তার পদ্ধতি নিয়ে। দেশের গনতন্ত্রকে সুদৃঢ় করার যে প্রক্রিয়া তার গুরুত্ব যেমন অপরিসীম, ভারতের মতো দেশে এই নির্বাচন পদ্ধতির খামতিগুলি নিয়ে আলোচনা দরকার বলে মনে হয়েছে আমাদের।

প্রথমে আমরা একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিতে চাই, আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাঠামো, দায়িত্ব এবং আচরনবিধি নিয়ে কোন কথা আলোচনা করব না, একই সাথে মনোনয়ন, দপ্তর বিন্যাস এগুলি আমাদের আলোচ্য নয়। এসব প্রতি নির্বাচনে কিছু না কিছু পরিবর্তন হয়। স্থান-কাল-উপযোগিতা ভেদে এ নিয়ে পর্যালোচনার সঠিক সংস্থাই হলো নির্বাচন কমিশন। এর বাইরে কিছু বিষয় থেকেই যায়। আমরা তার উপরই আলোকপাত করার চেষ্টা করছি।

দেশের প্রথম সাধারন নির্বাচনের কথাই ধরুন। ২৫শে অক্টোবর ১৯৫১ থেকে শুরু হয়ে ২৯শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২, টানা চারমাস ধরে চলেছে নির্বাচন প্রক্রিয়া। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, আমরা দীর্ঘ প্রক্রিয়া নিয়েই কথা বলছি। এই ২০১৯ এর নির্বাচনও ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ১৯শে মে শেষ। এই দীর্ঘ সময়ে দেশের নানা প্রান্তে সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও প্রকল্পের উপর বিভিন্ন নির্দেশাবলী আরোপিত হয়। নির্বাচন চলাকালীন এটা হওয়া প্রাসঙ্গিক। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের কারনে মানুষ নানা অসুবিধার সম্মুখীন হন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বল্প মেয়াদী নির্বাচন আছে। সেই সাথে নির্দেশিকাও থাকে অনেক শিথিল। আমাদের দেশে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারনে নতুন প্রকল্প ঘোষণা স্থগিত থাকে। ঘোষিত বা চালু প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের একাংশ নির্বাচনের বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়ে যান। ফলে চালু প্রকল্পের অগ্রগতিও বাধা প্রাপ্ত হয়। কর্মসংস্থান, ব্যবসা সবকিছুর উপর এর প্রভাব পড়ে। এছাড়া আরেকটা দিক যার উপর সবচেয়ে বেশী প্রভাব পরে সেটা হল শিক্ষা ব্যবস্থা। গ্রামীন ভারতের মেরুদন্ড সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থা। নির্বাচন ঘোষনা হওয়ার সাথে সাথে স্কুলগুলি নিরাপত্তা বাহিনীর ছাউনিতে পরিনত হয়। দীর্ঘ মেয়াদী নির্বাচন প্রক্রিয়া হলে পঠন-পাঠন ভীষন ভাবে বিঘ্নিত হয়।  নিরাপত্তার ব্যাপারটা আংশিক বা আঞ্চলিক। তবু দুয়েক কথা লিখতে হয়। নিরাপত্তা বাহিনী থাকে, টহল দেয়। হয়তো অনেকাংশে অপ্রীতিকর বা হিংসাত্মক ঘটনা এড়ানো যায়। কিন্তু স্পর্শকাতর এলাকার মানুষের মনে একটা ভয় থেকেই যায়। কিছু না ঘটলেও, রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ভয় মানুষকে গ্রাস করে রাখে। সাধারন মানুষের জীবন যাত্রা ব্যাহত হয়। স্বল্প মেয়াদী নির্বাচন প্রক্রিয়া হলে এই ভয়ের স্থায়ীত্ব কম হয়। কিন্তু বেশী দিন ধরে চলা নির্বাচন মানেই বেশী দিন ভয়ের মধ্যে থাকা।

    এবার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন বিষয় নির্বাচনী খরচ। দুটো দিক রয়েছে এই খরচের। একটা সরকারী , অন্যটা রাজনৈতিক । সরকারী খরচের মধ্যে প্রচার, সেনা বাহিনীর ছাউনি তৈরী থেকে যাতায়তের খরচ, ভোট ও ভোট কর্মীদের খরচ, পরিকাঠামোগত খরচ সহ নানা আনুষাঙ্গিক খরচা । এছাড়া ও রয়েছে ইভিএম তৈরী, ভি ভি প্যাট, বিভিন্ন অনলাইন পরিষেবা ইত্যাদি খরচ। এগুলির সবগুলি যে নিষ্প্রয়োজন এমন না। তবে আমাদের বক্তব্য এই টাকার পুরোটাই জনগনের টাকা, তাই পুরো প্রক্রিয়াটা বিশ্লেষণ করে এই পাহাড় প্রমাণ খরচের অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। হিন্দু পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২০১৪ সালের হিসেবে সরকারী খাতে খরচ হয়েছিল ৩,৪২৬ কোটি টাকা। আর রাজনৈতিক দলের খরচ, এর যে তথ্য আমাদের সামনে আসে তা হিম শৈলের চূড়া মাত্র ।বারবারই প্রমানিত হয়েছে নির্বাচন কমিশনের বেধে দেওয়া খরচসীমার মধ্যে থাকতে রাজী নয় রাজনৈতিক দলগুলি।এবারের লোকসভা নির্বাচনে সেই সীমা বেধেঁ দেওয়া হয়েছিল ৭০লক্ষ  টাকা । কিন্তু এই বাধাধরা সীমার মধ্যে অধিকাংশ স্বীকৃত রাজনৈতিক দলই থাকেনি। দেশের নানা প্রান্তে আয়কর নির্বাচন কমিশনের হানায় উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা। পাঠকমাত্রই জানেন এই উদ্ধার হওয়া টাকার অংকটা সামান্যই । আরো কত কত টাকা যে বিলি হয়েছে, কখনো ক্যাশ, কখনো মাদক, কখনো অন্যান্য সামগ্রী রূপে তার ইয়ত্তা নেই। এইসব খরচ যদি এক সাথে যোগ করা যায়,  যে অংকটা দাঁড়াবে একটা ছোট বা মাঝারী রাজ্যের বার্ষিক বাজেটের চাইতে বেশী। এর সাথে রয়েছে বাহুবলী, মস্তান পোষার খরচ।  নিঃসন্দেহে একটা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়ার অন্তরায় এই অনৈতিক অর্থপ্রবাহ।

    তবু টি এন শেষনের হাত ধরে এক আধুনিক নির্বাচন ব্যবস্থার দিকে হাঁটতে শুরু করে ভারত। এটা ছিল ঐতিহাসিক সদর্থক পদক্ষেপ। কিন্তু একটা উন্নয়ন শীল দেশ যদি এগোতে চায় তার সংসদীয় কাঠামো আরো মজবুত করতে হবে। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদী নির্বাচন না করে কীভাবে স্বল্প মেয়াদী নির্বাচন করা যায় তা চিন্তা করতে হবে।  মানুষের অর্থ সাশ্রয় করে কী ভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করা যায় তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে বলে আমরা মনে করি। তাই এই পাঠকের কাছে এই প্রতিবেদন তুলে ধরলাম আমরা।